বুধবার, ৫ মার্চ, ২০১৪

তানিম কবিরের “ওই অর্থে”..একটি স্পষ্টীকৃত ক্রৌঞ্চকথন



বৃষ্টির কবিতা লেখা প্রসঙ্গে

তবে আমি বৃষ্টির কবিতা লিখিবো,
এটা বলতে পারি।
একদিন মানে কোনও একদিন
বৃষ্টিথেমে গেলে মনে হয় যেমন ‘ও আচ্ছা!’
সেইরকম হুট করে টের পাওয়ার অঙ্গভঙ্গিসহকারে
বৃষ্টির কবিতা লেখা দরকার।
যেহেতু ‘এইদেশে বৃষ্টি হয়’-
আর ছাতার মিস্তিরিরা ভোট দিতে যায়;
মেরামত করা কালো ছাতা নিয়ে তাই,
বৃষ্টির কবিতা লিখতে চাই আমিও।



কবি বৃষ্টির কবিতা লিখতে চান, সমস্যা নেই কোনো তবে কোন অর্থে তিনি কবিতা চিত্রিত করবেন তা একটু বুঝতে পারা সময়সাপেক্ষ ব্যপার বৈকি। গুড়ি-গুড়ি ধারার অর্থে নাকি মুষলধারার পরাক্রান্ত-বেগ অর্থে..আসলে কোন অর্থে? শাব্দিক অর্থে নাকি রূপক অর্থে; নাকি দুটোই একইরকম কিছুটা কাছাকাছি “ওই অর্থে”?


কোন অর্থে একটি ক্রৌঞ্চ তার একান্তই একটি সন্ধ্যেকে সন্নিবেশের গাঢ় ছায়ায় অবলোকন করলো? কখনোবা সওয়াড়ী হয়ে ছুটে চললো নির্জন প্রান্তরে; আবিষ্কারের নেশায় উন্মত্ত হয়ে তছনছ করে চললো গহীন শালবন, আত্মজিজ্ঞাসায় ভরপুর হয়ে কোন নির্জন বনছড়ার কোলে গা এলিয়ে দিলো? কোন মাউথঅর্গ্যানের সুরের মায়াজালে আবদ্ধ করলো মাষ্টারবাড়ি স্টেশন কিংবা তার সন্নিকট তা এক রহস্যই বটে! কাব্যকলার রহস্যে মোড়ানো কোনো জার্নালিকায়ই তার স্বরূপ উন্মোচন হতে পারে হয়তো।


‍‍অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৪ ইং সালে প্রকাশিত “তানিম কবির” এর কাব্যগ্রন্থ “ওই অর্থে” বইটি আশ্চর্য একটি কবিতা-ক্ষেত্রের প্রয়াস তুলে ধরে যা সফলতার সাথে একত্রে সমন্বয় ঘটিয়েছে কোনো ক্রৌঞ্চের হাহাকারপূর্ণ একটি জমাটবদ্ধ এলানো জীবনের; যেখানে ঝরাপাতার মতো বিক্ষিপ্ত হয়েছে কবিমনের উপচে ওঠা জারকরস। এই রস পরিপূর্ণভাবে একটি ভিন্নার্থে, কবিভাষার নির্দিষ্ট, কিছু সাজানো গোছানো মূলত কবিমানসের ওই অর্থেই পাঠকদের সিক্ত করে চলে।



“এগেইন

হেমন্ত পুনঃ পুনঃ আসে
রেলের বাঁকের পাশে
আশা পড়ে থাকে তবু
তাহাকে পাবার-
আমি তার না থাকার
ব্যাথাটাকে কেন যেন
টের পেতে চেয়েছি আবার”



যদিও “প্রভাত চৌধুরী” তাঁর পোস্টমডার্ন বাংলা কবিতার ভূমিকায় বলেছেন “আজকাল অনেকেই এমনভাবে বাংলা কবিতাকে শেষ করেন যাতে বোঝা যায় কবিতাটি অসমাপ্ত” কিন্তু “ওই অর্থে” কবিতাগ্রন্থটিতে তানিম কবিরের অধিকাংশ কবিতাই উল্লেখিত নিয়মটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে কোনোরূপ যুক্তিফাটল বা লজিক্যাল ক্র্যাক বা লজিক্যাল ক্লেফটের উন্মেষ না ঘটিয়ে পাঠককে সুন্দর সমাপ্তির দিক টেনে নিয়ে পৌছেছেন সুন্দর সমাপ্তিতে। ৩৬ টি কবিতার সমন্বয়ে মলাটবদ্ধ হওয়া বইটিতে কবি খুঁজে ফিরে বেড়িয়েছেন নিজেকে কিংবা তার ছায়াকে।


“ঘুমভষ্ম

তোমার হাতের লেখা নকল করে
অজস্র চিঠি আমি লিখেছি নিজেকে,
লটকন গাছের নিচে বিকেল পুঁতেছে
তার স্নেহধন ছায়া-”



কবিতার বিষয়বস্তু এবং রূপকলার মিলিত সত্তা যখন একসাথে উপস্থাপিত হয় তখনই কবিতার আসল সৌন্দর্য্য উপঢৌকন হয়ে বের হয়ে আসে, করে পাঠকের মনের উপর রেখাপাত। জীবনানন্দ দাশকে উৎসর্গ করা “নিশ্চুপে উড়িতেছে চিল” কবিতায় চিলরূপী কবি উন্মোচন করেছেন তার নির্জন-ভজনের স্তর, একক ভুবনের অক্ষমতা যা ক্ষণিকের তরে পাঠককে কবিভুবনের সাথে একসূত্রে গেঁথে চলে..


“বাড়তি অবকাশে, কর্পুর ঘ্রাণ ভাসে-
ভাঁজ করা জীবন-অভিমুখে।
কোথাও বুকের তিলে
অজ্আত কীট সেজে রই,
আমি বইতে শুরু করেও বইতে পারিনা কেন হাওয়া-
এ জবাব বুকে নিয়ে নিশ্চুপে উড়িতেছে চিল!
সোনালী ডানার চিল।”



একাকীত্বের স্বরূপ আরো তীব্রভাবে ফুঁটে বেড়োয় “মেবি স্কাই” এর লাইনগুলোতে:


আকাশ অতটা উঁচু নাওহতে পারে
এই সংশয়যোগে নদীর কিনারে
বসে আছি এইটুকু বসে থাকা নিয়ে

“আমার যা ভালো লাগে ইনিয়ে বিনিয়ে
বর্ণনা করে শুধু বলে কয়ে যাওয়া
আকাশটা হতে পারে আকাশেরই হাওয়া
ফুলিয়ে রেখেছে কেউ চারিচারি ধারে
আকাশ অতটা উঁচু নাও হতে পারে”



সর্বজনীনতার পাশাপাশি কবি হালকাভাবে স্যাটায়ারের কিছুটা দোলা দিয়েছেন তার “স্বাধীনবাংলা বিষ্ণুপ্রিয়া হোটেল” কবিতাটিতে-


“এমনই বিজয় দিবস এসেছে ভুবনে যে,
বিষ্ণুপ্রিয়া হোটেলে বসে থাকা যাচ্ছে প্রায় আনমনে!
বিজয়ের চেতনায় সমুজ্জল মাছেরা
সদরঘাটেই পাড়ছে ফাল
কল্যানপুর হতে, একটি মঙ্গলশোভাযাত্রায় চড়ে
আমরা এসেছি পড়ে এথায় রে হায়!”




কবিতার মুখ্যত চাররকম প্রকরণঃ অলংকার, রূপকল্পনা, ছন্দ এবং ছন্দস্পন্দ এর সরব উপস্থিতি রয়েছে “ওই অর্থে” কাব্যগ্রন্থটিতে। কবিতাগুলোর শব্দ, স্পর্শ, গন্ধ ও রূপের মাধ্যমে কবি পাঠকের ইণ্দ্রিয়ের উপর প্রভাব বিস্তার করেছেন, আক্রান্ত করিয়েছেন পাঠককে ভাবালুতার ঘেরাটোপে। “রুশাই তারুশ” টাইটেলের কবিতাটির নামকরনটি উল্লেখযোগ্য। কবিতাটি পঠণের মধ্য দিয়ে যে চিত্র সমাবেশের উদ্ভব ঘটে তাতে এর মধ্যস্থিত তীব্র আকুতি ভাললাগার সমন্বয়ে ডালপালা বিস্তার করেঃ



অসুখও আমার,
নিরাময়ও তুই-

শিরাময় সুঁই যেন
বিপুল সিরিঞ্জ যেন
ভ্যাকুয়াম পুশ-

রুশাই তারুশ মম
রুশাই তারুশ!



“যুদ্ধবিমান” কবিতাটির দুয়েক-ছত্র অবলোকন করলে ছন্দের উপস্থিতির প্রমান পাওয়া যায় তবে কবিতার সমগ্রতা বা ঐক্যের কোন ঘাটতি হয়না তাতে:


“হেমিলি আকাশে চাঁদ প্লেনের পাংখা লাগে ধার
আমি এ চাঁদের তলে নখ কাটবার সমাচার
বলেছি লেবুর কাছে, বলেছি এখন থেকে তুমি
আরো বেশী পেশাদার স্মৃতি চারনার সিমফনি
হয়ে ঠোঁটে চুকচুক আফসোস বেদনার ধ্বণি
প্রত্যাহারের দিকে ধাবমান কালচে গোঙানি”



কবিতায় সৌন্দর্যোপলব্ধি বলে একটি ব্যপার থাকে। সে সৌন্দর্য ধরা দিতে পারে কবিতায় বর্ণিত সেন্ট্রাল থিমটিতে, প্রকাশভঙ্গিতে, আনন্দপ্রদান করতে পারার সক্ষমতার বিষয়টিতে কিংবা বোধ্য-দুর্বোধ্যতার কোলাজে। সম্পূর্ণ আনন্দ লাভ করা কিংবা সৌন্দর্যসৃষ্টি যে উদ্দেশ্যেই হোকনা কেন ভাবনার এক রাশ সম্মেলনের ছোঁয়ায় তানিম কবির তার “ওই অর্থে” এর মাধ্যমে হয়ে উঠেন আরো বেশী প্রকাশমান এবং আরো বেশী মূর্ত, কবিতার মাধ্যমে ভেঙ্গে ফেলেন তার চারপাশে সৃষ্টি করা দুর্বোধ্যতার দেয়াল। প্রিয় পাঠক, আসুননা চলে আসুন, কিছুক্ষণের জন্যে ঘুরে আসি কবিতার পাখিঅলারূপী তানিম কবিরের একান্তই নিজস্ব, তরঙ্গায়িত চিত্রপটের অব্যক্ত কথামালার আসর “ওই অর্থে” থেকে-



বাদামের সাঁকো
আমি কেন গেজদাঁত, বাদামি রঙের চোখ প্রত্যাশা করি!
কেন ধরি বাম হাত, অফুরান গন্ধের পুষ্পশুমারি-

পরাণ পড়েছে,
উঠে দাঁড়াতে কি পারবে না আর?
পত্রপোড়ানো আলো; সে আলোয় ভেসে ওঠে তার

বাতাবি লেবুর সার-সংক্ষেপে
নড়ে ওঠে তার-তাকাবার ভঙ্গিটি!
আমি কবে ভুলে গেছি হাঁটুজল জলপাই তবু

জলের ধমক আসে
বলে মনা ডুবে যাও, ডুবে-
ডুবের ভেতরে বসে, হাঁটুজলে লালরঙ শাপলা ফোটাবে।

আমি খাঁচার ব্যবসা করি
পাখি সবকরেরব খাঁচার ভেতরে-
আমিপাখিঅলা, ডানা ভাঙি-উড়তে বলিনি তাকে,

চুপচাপ বসে
থাকতে বলেছি শুধু থাকো-
উড়ে টুরে চলে গেছে গেজদাঁত- বাদামের সাঁকো।







***************
এক নজরেঃ
বইঃ ওই অর্থে
লেখকঃ তানিম কবির
ধরনঃ কাব্যগ্রন্থ
প্রচ্ছদঃ খেয়া মেজবা
প্রকাশকঃ শুদ্ধস্বর
প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৪
মোট পৃষ্ঠাঃ ৪৮
মূল্যঃ ৯০.০০ টাকা



**************
আশরাফুল কবীর
২২ শে ফাল্গুন, ১৪২০
রামপুরা, ঢাকা।

সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪

চন্দ্রবিন্দু-উপাখ্যান কিংবা ভৌতিক পরগাছা সময়ের কিছু স্ন্যাপশট




রোদ্দুর হারিয়ে গেলেই ঝাপটা দেয় আঁধার
চেপে বসে শান-বাঁধানো ঘাটে;
নিক্বণ তোলে পাড়া বেড়াতে বের হয়
কিছু যাযাবর প্রহেলিকা।

এক লহমায়-
অবারিত বন্দরে ভেড়ে কতো কতো জাহাজ
তীক্ষ্ণ ঠোঁটের বৈঠকী আওয়াজে ভেসে আসে;
আগামেমননের পদধ্বণি!
দেশলাই জ্বেলে আহবান জানায় এক দৌবারিক
কালের খোলা-দরোজার প্রতিশ্রুতিতে।

দেবী-বোধন কিছুটা প্রলম্বিত বলে
অপ্রাপ্তির সম্মেলন ঘন হতে থাকে
আশ্বিনের শেষবেলায়।








আশ্বিনের রাতগুলো দীপ জ্বেলে আসে
আশ্বিনের রাতগুলো সরব হয়ে আসে, অথচ
এই ভর-আশ্বিনেই গেলবার ভরাডুবি হয়েছিল
ধানী জমির বাগিচা।

খড়ের নতুন কাঠামো সন্ধানে
কল্লোল তুলেছিল ভরত, অযোধ্যা অভিমুখে।

ভীষনরকম ডাগর চোখের চাহনিতে
ঘাড় উঁচিয়েছিল গোলাঘরের অতন্দ্র হুতুম
চোখে ছিল কতিপয় অবিশ্বাস!

অবিশ্বাসের ইকারুস! ছিঁড়েফুড়ে
ডানা মেলতে চেয়েছিল;
এক আঁজলা বিশ্বাসের সিক্ততায়।

হাড়িকাঠ জ্বলে চলে..
নতুন মেমোরিয়াম সন্ধানে
প্রস্থান করে অশরীরীরা।

তল্লাটে তল্লাটে অমাবস্যা ঘেঁটে চলে
ডাকাবুকো এক শেঁয়াল
কাঁটা-জঙল ঘেঁষে ঘোরাফেরা করে
হরিরামপুরের বাসন্তি প্রতীক্ষায়।







ইতিহাস টেনে ক্লান্ত হয় ভরদুপুর।
ফিরতে চায় তিরিশ ক্রোশ দূরের
সাজানো উপত্যকায়।

যে ঘাটে জমা আছে কিছু কথা
টেনে ধরা গুটিকয়েক পেঁচানো লতা;
সে ঘাটে কাঁসার-বাসনে ভেসে ওঠে
দীপ্ত এক আ-ধোওয়া মুখ!

ভোরের ইসকাপন ছুড়ে দেয় সেঁওতিরা
হাতছানি দিয়ে ডাকে একগাছি শাঁখ।

বাউণ্ডুলে মাঝি পাড়ি দিয়ে আসে
সাত-সমুদ্দুরের নিকোনো, গহীণ এক নদ।









শকুন্তলা ভুলেছে শরবন!

তাই সওয়ারী ফিরে চলে তার চেনা-পথ ধরে
ভুলপথে হেঁকে চলা তেজী সোহরাব আজ
আত্ম-পরিচয়ে বিভোর হয়ে যায়; আথালিপাথালি
ঝড় উঠাতে চায় শৈশবের কাঞ্চনজঙ্ঘায়!

হাসে গুলফাম!
হেসে হেসেই স্বাগত জানায় মাছরাঙা-রঙ
গ্রহণকালে বৈষ্ণবী জীবন উপচে ওঠে;
ক্ষ্যাপাটে-বৃষের জারক রসে।









মিলনোৎসবের ফ্যাস্টিভাল!

শীর্ণ নদীতেও বান বইয়ে দেয়
লুক্রেসির চিৎকার!
খোশ মেজাজে চৌকাঠ উতরায়;
অনুভূতিহীন এক-চোখা সাইক্লপস।

ভ্রান্তির সদনে কেঁপে কেঁপে ওঠে
বাতিঅলা আকাশ; আঁধার-সলতে উসকে দিয়ে
পৌছে যায় নির্ভাবনার অঙ্গরাজ্যে।

নিশ্চল সময় তেতে থাকে
তাতে শারদীয় সুখ বিলীন হয়ে যায়।








সেঁওতিরা ঝরে যায়; গুন টেনে
প্রস্থানের প্রস্তুতি নেয় আরো কিছু;
কিছু ফুল নির্বাক তাকায় অরোরা অপেক্ষায়।

খালি ইস্টিশন এক!
শূণ্য কামরায় চিৎকার করে ঝিমোয়;
কিছু রং-জ্বলা বাঁশি!

জারুলের প্যারামিটার ঘিরে রাখে
মাস্টার-বাড়ি স্টেশন;
নবকুমার, আর কতদূর শিষ-কুড়োনো?
সময় গড়িয়ে বেলা যে প্রায় গেঁরুয়া-বসন!









সিলেবাসের গলি-ঘুপচিতে আটকে পড়ে
ডোরা-কাটা শরীর; নিয়ম কানুনের
অবসন্নতায় ভোগে এক কৃষ্ণ-দাঁড়কাক।

চি-হি-হি স্বরে পিঁছু হটেছিল যে পেগাসাস
পৌষের চেয়ারে গা এলায়, তবুও কেন
নিসঙ্গতায় ভোগে মৌসুমী সকাল?

পূজোর-অর্ঘ্যে মন্ত্র আওড়াবে বলে, পুরোহিত
শূণ্য বেদীতে কেবলি হুটোপুটি খায়!









জলে ডুব দেয় পানকৌড়ি
মিশে যায় স্বাস্থ্যবান মাছেদের সাথে।

চা পানের ছলে টংঘরে জমে যায়
কিছু ধূমায়িত চিত্র, অজানাই থেকে যায়
ভিঞ্চির নাম; যে গড়েছিল
মোনালিসা এক।

বেয়ারারা ছুটে চলে সারারাত, নির্ঘুম
নতুন বউ কাঁধে তোলার অভিপ্রায়!









আগুন জিইয়ে রাখে মনের চারকোল।
বর্ষণে ভিজে, শীতের ওশে কেমন নিভু নিভু;
একফালি প্রাণ!
শাঙনের কোলে কে খোঁজে এলিয়টগুচ্ছ
পড়ো-জমিনের গান?

যদিও তীর্থ যাত্রার প্রস্তুতি বেশ জোড়েশোরে, তবে
এ শহরে এখন ভর করেছে চিরস্থায়ী রাত
ঊষার আলোয় কদাচিৎ পালকি চড়ে সূর্যের দলবল;
শাদা-রশ্মিদের আজ বড়ো দু:সময়!

ঝটিকা আলোয় চষে বেড়ায় অসুরের দল
পৃথিবী এখনো খোঁজ করে চলে
এক নতুন অবতার!









কখনো কখনো হাত বাড়ায় হরিরামপুর
মেঠো-পথ, সৌরভ ছড়ানো আকন্দের দল;
জোৎস্না-অবসরে ছড়িয়ে দেয় লাল-দীঘিটার স্বপ্ন।

ছায়ায় বসে হেসেই চলে বামুন-সময়
ঘুমন্ত এ অভিমন্যু-চরাচর!
শেষ ট্রেন ছুটে চলে রাশ ছিড়ে
পেরিয়ে কত নাম না জানা বন্দর!

তবুও ঘিরে রাখে কিছু চন্দ্রবিন্দু-উপাখ্যান
ভৌতিক পরগাছা-সময়ের উঠোনে।



*********************************
#ছবি কৃতজ্ঞতা ও ছবি মডেলঃ অনিন্দ্য অন্তর অপু
১৪ই অগ্রহায়ন, ১৪২০।

শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৩

কাগজের নৌকা..মন গহীণে ছুটে চলা সাম্পান এক




আমাদের কল্পনা অন্তহীন। আমাদের প্রতিদিনকার ধরাবাঁধা জীবন তার নিয়মিত গণ্ডির বাইরে এসে তৃপ্তি-অতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার পাশাপাশি পূর্ণতা-অপূর্ণতার হিসেব নিকেশে অনবরত খোঁজাখুজি করতে চায় কল্পলোকের আস্তাবলে। এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায়, পারিপার্শ্বিকতার যাঁতাকলে কখনো কখনো আমাদের স্পন্দন হয় অবলার ন্যায় পিষ্ট, আত্ম-সংকুচিত, সীমাবদ্ধ আবার কখনোবা সমস্ত বিধি-নিষেধ অগ্রাহ্য করে ভর দেয় ইকারুসের ডানায়। যুক্তি-প্রথার নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে, বিস্তারের সীমাবদ্ধতাকে গোঁজামিল দিয়ে ছুটে চলে নিরন্তর,স্বল্পতাকে পুঁজি করে আস্তানা গাড়তে চায় নূতন কোন বাহানায়।


কাগজের নৌকৌয় ভর দিয়ে উত্তাল কোন বিশাল জলরাশির মোকাবেলা করা যাবে কি যাবেনা সে প্রশ্নটিকে আপাতত আমাদের মনের একটি ওয়াটারপ্রুফ কম্পার্টমেন্টে তালাবদ্ধ করে রাখি, সুপ্রিয় লেখক আশীফ এন্তাজ রবির আমন্ত্রণে কাগজের নৌকায় সওয়ার হয়ে ভেসে পড়ার পরে না হয় চিন্তা করা যাবে উত্তাল সমুদ্রে, বিশাল বিশাল দানবাকৃতির ঝড় মোকাবেলা করে সেই নৌকা টিকে থাকতে পারবে, নাকি পারবেনা? নাকি চিরটাকাল হালবিহীন হয়ে অজানা পথে ভেসে বেড়াবে?


জলে নৌকা থাকুক সমস্যা নেই,নৌকায় জল থাকলে সমস্যা। তুমি সংসারে থাকো ক্ষতি নেই, কিন্তু তোমার মধ্যে যেন সংসার না থাকে। আমরা কেউ শ্রীরামকৃষ্ণ নই। কাজেই সুনাগরিকের মতো আমাদের সংসারের ভেতর যেমন বাস করতে হয়, তেমনি আমাদের ভেতরেও জোরালোভাবে সংসার আছে, সংসার থাকে। মাস গেলে বাড়িভাড়া, আইপিএসের ব্যাটারি নষ্ট হলে, সেটি বদলে ফেলা, বড় মেয়েটা অন্কের চেয়ে ইংরেজিতে কেন কম নম্বর পেল, সেটি নিয়ে ভাবা, ছোট মেয়েটার জ্বর হলে তার মুখে থার্মোমিটার পুরে দেয়া-কত কাজ। সংসারে না থেকে উপায় আছে।


সংসারে আবদ্ধ থাকা বা না থাকার ইচ্ছেটিকে সুপ্ত রেখে গল্পের দুই মূল কুশীলবের একজন রাজীব হাসান এর উপর প্রথমেই দৃষ্টি ফেরানো যাক। বয়স ৩৫, পেশায় সাংবাদিক, লেখকের ভাষায় “সাংবাদিক বলতে যে সাহসী, নিষ্ঠাবান, দুর্ধর্ষ, যুযুধান, জঙি এবং সত্যপ্রকাশে উদগ্রীব একদল মানুষের ছবি ভেসে ওঠে, আমি ঠিক তাদের দলে নই” বাঁইশটি অধ্যায়ে বিভক্ত অনেকটা ডায়ালগের ছলে কাহিনীর ব্রম্মাণ্ডে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লেখক আমাদের শোনান তার শ্যাওলা পড়া, ছকবাঁধা জীবনের গল্প, যে জীবনে ভরপুর হয়ে আছে কপট মান-অভিমান, হাসি, আনন্দ আর কিছু জমে থাকা,ভারী হওয়া দীর্ঘশ্বাস। সে জীবনে সওয়ারী হয়ে ক্রমে ক্রমে আসে রাজীব হাসানের স্ত্রী মিতু, সিমু ইসলাম, মারুফ, মুসা, জিমিসহ আরো গোটাকয়েক।


আমরা তিন হতভাগা পুরুষ, তিন মতিচ্ছন্ন স্বামী, তিন বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস, তিনটি গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকি। ক্রমেই তিনটি গ্লাস ঘেমে ওঠে। সিমু চিয়ার্স শব্দটার বাংলা করেছে, মালে বাড়ি। আমরা গ্লাস ঠোকাঠুকি করে একযোগে বলি, মালে বাড়ি। এক চুমুক খেয়েই মারুফের চেহারা থেকে বিষণ্নতার পর্দা সরে যায়। দারুন একটা হাসি দিয়ে বলে, লাইফ ইজ বিউটিফুল। জীবন সুন্দর কিনা সেটিকে মুহুর্তের মধ্যে প্রমাণ করতে চারপাশ আলোকিত করে অবশ্যম্ভাবীভাবে হাজির হয় মূল গল্পের আরেক কুশীলব নীল অপরাজিতা।


আমি নীল, দ্য নীল অপরাজিতা। আমি ফরসা, মারকুটে সুন্দরী। রোজ সকালে আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই। অনেকটা সময় নিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকি। তাকিয়েই থাকি, আমার আশ মেটেনা। নিজেকে খুব করে জরিপ করি। কোথাও কি কোন খুঁত আছে? নাকটা কি একটু বোঁচা? ঝলমলে চুলগুলো আজ কি একটু কম ঝিকিমিকি করছে? আয়নার দিকে তাকিয়ে আমি মুখ ভেংচাই,ট্যারা চোখে তাকাই, ভ্রু কুঁচকাই, দাঁতমুখ খিঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। এটা হচ্ছে আয়নাকে কষ্ট দেওয়া। তারপর চোখমুখ স্বাভাবিক করে আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে একটা ভুবনজয়ী হাসি ছুড়ে মারি। এটা হচ্ছে আয়নাকে সুখ দেওয়া। এসব আমার সকলাবেলার ‘আয়না আয়না’ খেলা। খেলা শেষে নিজেকে গুছিয়ে, ছোটখাটো খুঁতগুলোকে মেরামত করে, ক্লিপের নিচে ঝলমলে চুলগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে, চোখের নিচের কালি সযত্নে চাপা দিয়ে রাস্তায় বের হই।


নীল অপরাজিতার মনের অলিগলিগুলো খুঁজে ফিরে এর উৎসমূলগুলো বের করা হতে পারে নেহায়েত এক ঝক্কির কাজ। শুরু থেকেই প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসীরূপে হাজির হয় গল্পের নীল অপরাজিতা। অবশ্য শেষ দিকে এই আত্মবিশ্বাসে এসে চিড় ধরে, বলা ভালো, রাজিব হাসানের একাগ্রতায় আর হার না মানার মানসিকতা তাকে শেষপর্যন্ত স্থিরপথে আসার রাস্তা দেখাতে বাধ্য করে, মুহূর্তে মুহূর্তে ভেঙ্গেচুড়ে আবারো শীতলীকরনের প্রক্রিয়ায় জমাটবাঁধার চেষ্টা করে নীল। বলে নেয়া ভালো অপরাজিতা আর রাজিব হাসানের মেলবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়াটিকে লেখক একসূত্রে দারুনভাবে গেঁথেছেন ‘ফেসবুক’ নামক বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ টুলসটিকে ব্যবহার করে।


পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে, ছেলদের ঘোল খাওয়া। রাজিবকে যখন বললাম, আমি বেশিদিন নেই, তখন রাজিব বেশ ভচকে গেল। এরপরতো সুনামির মতো মেসেজ পাঠানো শুরু করছে। চলে যাচ্ছেন মানে? কোথায় যাচ্ছেন? বিদেশে? নাকি অন্য কোনো সমস্যা? আচ্ছা আপনার কোনো অসুখ বিসুখ নেইতো? চলে যাওয়া মানে কি? কোনো ভয়ংকর কিছু? হি হি হি। ছেলেটা ভালোই ঘোল খাচ্ছে। আহা রাজিব, খাও, খাও, আরও ঘোল খাও। আরেক গ্লাস ঘোল বানিয়ে দেব?


বইয়ের প্রথমাংশের বার্তা আদান প্রদানের সময়টুকুতে লেখক রাজিব কিংবা অপরাজিতা দুজনকেই তাদের নিজ নিজ সাম্রাজ্যের বিস্তার অটুট রেখে প্রতিপক্ষকে ঘোল খাওয়ানোতে ব্যস্ত রেখেছেন। এ ঘোল খাওয়ানোর প্রতিযোগীতায় অপরাজিতা তার স্বভাবগুণে জীবনের গল্প খুঁজে বেড়ানো রাজিবের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে থাকে। তবে শেষাংশে সেই উত্তেজনা হ্রাস হয়ে দুজনেই পরস্পরের কাছাকাছি আসার সুযোগে ব্যস্ত হয়। লেখক আশ্চর্য দক্ষতায় আমাদের চারপাশের ঘটনাপুঞ্জ থেকে বাস্তবতার নিরিখে আমাদের নিয়ে তার আবেগের নৌকায় ভেসেছেন, কখনো সে আবেগ বাঁধ ভেঙ্গেছে,কখনো ভাঙ্গেনি, শুধুমাত্র গতিপথ বদলিয়েছে, স্তব্ধ করেছে কয়েকটি মুহুর্তের জন্য, ফিরে ফিরে নজর বুলাতে বাধ্য করেছে আমাদের সঙ্গী সারথিদের উপর:


আমি কেঁপে উঠলাম। নিজেকে শক্ত রাখব ভেবেছিলাম। শক্ত থাকা এতো সহজ হলো না। তবু প্রাণপণ নিজের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আমি পাঁচটি শব্দ কোনোক্রমে উচ্চারণ করলাম। আমি ভীষন ভাঙ্গা গলায় বললাম, মিতু। আমি আলাদা থাকতে চাই। আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিল মিতু। সেই হাত আচমকা থেমে গেল। মিতু কোনো কথাই বলল না। আমিই ভেঙ্গে পড়লাম। আমি হু-হু করে কাঁদতে লাগলাম। মিতুর বুকে মাথা রেখে। মিতু পাথর হয়ে সেই কান্না শুনল। একটা কথাও বলল না, একটি শব্দও না।


স্বাভাবিকভাবে পাঠকমাত্রই বিমোহিত হয়ে নিজকে মেলাবে ঘটনার ঘণঘটায়, একজন রাজিব কিংবা একজন অপরাজিতার অবয়বে, নানান অনুষঙ্গে, নানারকমের ঘটনাপ্রবাহে কেউ কেউ অপেক্ষায় থাকবে কারো কারো ফেরার প্রতীক্ষায়। গল্পের অবয়বে অপরাজিতার স্বামী একজন শুভ হয়তো অনেক ধীর, স্থির, ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করে শেষ সময় পর্যন্ত অপরাজিতার জাহাজ নোঙরের অপেক্ষায়, ঠিক তেমনিভাবে একজন মিতুও হয়তো অপেক্ষা করে থাকে শেষ সময় পর্যন্ত একজন রাজিব হাসানের মুহূর্তের ভুল ভেঙ্গে ফেরার প্রতীক্ষায়। আশার কথা হলো এই, ভিন্ন পথে চলে যাওয়া দুটি নৌকো আবারো ভেসে চলে তার পুরোনো গন্তব্যের অভিমুখে:






এক নজরেঃ


বইঃ কাগজের নৌকা
লেখকঃ আশীফ এন্তাজ রবি
ধরনঃ গল্পগ্রন্থ
প্রচ্ছদঃ সব্যসাচী হাজরা
প্রকাশকঃ প্রকাশক
প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
মোট পৃষ্ঠাঃ ৯৪
মূল্যঃ ১৮০.০০ টাকা
আইএসবিএনঃ ৯৭৮-৯৮4-৩৩-৭৭৭৩-৯


পুনশ্চ: লেখক গল্পের শুরুতেই কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গিতে বলে রেখেছেন “এই গল্পের মূল চরিত্র একজন লেখক। আমি নিজেও টুকটাক লেখালেখি করি। কাজেই কেউ যদি ধরে নেন, এটা আমার গল্প,তাহলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়া ছাড়া অন্য উপায় থাকবেনা” সুপ্রিয় পাঠক, আসুননা চলে আসুন, কাগজের নৌকোয় ভেসে গিয়ে জেনে, শুনে, বুঝে, সজ্ঞাণে লেখকের নিজের গল্প মনে করে লেখককে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মাথায় হাত দিয়ে বসিয়ে রাখি।



আশরাফুল কবীর
১৯শে আশ্বিন, ১৪২০
মতিঝিল, ঢাকা।

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৩

কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধান









মাত্রইতো কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধান!!

হায়!
তোমরা সকলেই ব্যস্ত হয়েছো প্রাত্যাহিক নানান রঙ্গে
এখনো আমরা নীচেই আছি, অন্ধকার প্রকোষ্ঠে
নিমজ্জিত হয়ে গুনে চলেছি প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ধারাপাত!
যবনিকা পতনের গান,
ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে চলেছে
দিনরাত সব একাকার করে বেঁচে থাকার আশায়
খাঁচাবদ্ধ বুভুক্ষু শতো সহস্র প্রাণ,

জেনো, জেনে রেখো-
আমরাও আছি তোমাদেরই কাছাকাছি
শুধু কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধান!!


আমরা কি ছিলামনা তোমাদেরই আনন্দের উৎস?
পালা-বদলের হাতিয়ার?
এখনো তিল তিল করে লড়ে চলেছি ক্ষুধার্ত অবস্থায়
খুঁজে চলেছি একটুখানি ফাঁকফোকর
আরেকটি নূতন ভোর প্রতীক্ষায়
ধরে রেখেছি এখনো মুমূর্ষু ধড়টিতে
একটুখানি বেঁচে থাকার প্রাণ-

জেনো, জেনে রেখো-
আমরাও আছি তোমাদেরই কাছাকাছি
শুধু কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধান!!


এখনো পৌছুলোনা কেনো শক্তিশালী অক্সিজেন পাইপ
আমাদের বুঝি বাঁচার সাধ নেই?
কিভাবে যেনো পার করে দিয়েছি শতবর্ষকাল!
কোনো কাল্পনিক সময় প্রতীক্ষায়..

জানি,
এটা তা ধিন ধিন সময়,
তবুও আকঁড়ে ধরতে চাইছি
মানবতার টাইটেলে বিপর্যস্ত হতে থাকা
আমাদের বিপন্ন জান-

জেনো, জেনে রেখো-
আমরাও আছি তোমাদেরই কাছাকাছি
শুধু কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধান!!





[এখনো রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপের নীচে আটকে থাকা মুক্তির প্রতীক্ষায় শতো শতো ভাইবোনদের প্রতি]



************
আশরাফুল কবীর
১৩ই বৈশাখ, ১৪২০
মতিঝিল, ঢাকা।



সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১২

“আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে”






রাধা



আমারওতো অনেক কাজ থাকতে পারে
তাইনা?
অপেক্ষাতে অনেকটা সময় বসিয়ে রেখেছ
অস্থিরচিত্ত আমি
এ মুহূর্তে তোমার জলকেলিতে ব্যস্ত হবার কথা
বলো রাধা: এ  তোমার কেমন
রুটিনবিহিীন অসংলগ্ন প্রথা?







খোলা জানালায় এক বসন্তখচিত মুখ



অনেক দিন পর, প্রতীক্ষার অনেক রূদ্র সময় পর
ও বাড়ির জানালাটি হঠাৎ খুলে গেল আজ
সাথে সাঁই সাঁই করে ছুটে গেল সকল চঞ্চলতা
আবারো ঝাঁপটে ধরলো বৃহন্নলা সময়
তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিয়ে চললো
কোন এক হেমন্ত সন্ধার অন্ধকারে
অদ্ভুত, ঘোরলাগা কোন জোনাকের আকারে।

এখন আর অতোশতো মনে পড়েনা
কিছুটা অস্পষ্টতা যেনো
শুধু উঁকি দিয়ে যায় শিহরণ জাগানিয়া বাতাস
মনের কুঠুরীতে জমা হয়ে থাকা গুটিকয়েক ঝোপবন
আলোহীন, স্পর্শহীন
কিছু বৃষ্টির ছিটেফোঁটায় সময় যাপন
সম্মোহিতের ন্যায় আনমনেই বলে ওঠি
বসন্তখচিত মুখ: জানতে পারোনি, বুঝতে পারোনি
দুরন্ত সময়ে ছিলে কতোটা আপন।

আজ অবেলায়, এতোগুলো রজনী পর
চারপাশ জুড়ে শুনি হারানো বাঁশির সুর
প্রতীক্ষায় থাকা রাত্রি প্যাঁচার মতো খুঁজে বেড়াই
একেবেঁকে ছুটে চলা পথের উৎসমুখ
বুঝতে পারি, একেলা পথ হেলেছে কোন দিকে
দ্বিধাহীন দূরে, ক্রমশ দূরে, সে হয়েছে ফিকে।




[“আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে” এ চরনটি “‍শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” এর “গীতাঞ্জলি” কাব্যগ্রন্থের ১৬ নং গান থেকে সংগৃহীত]




***************
২৭শে আশ্বিন, ১৪১৯
মতিঝিল, ঢাকা।

রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১২

আঁধারী সাঝ









মধ্যচৈত্রের বনে মশগুল এক বিষন্ন ঋষি
কেবলি কলহ করে ঝরে পড়া বকুলের সাথে
কোন মৌতাত জাগাতে পারেনা সকল চিত্রগাঁথা
অর্ফিয়াসের সুরে..
শুধু
ক্ষণে ক্ষণে  নিয়ে যায়  
ফ্ল্যাশব্যাক করে দূরে?


আজ-
কড়িকাঠে বেজে চলে একটানা ঘুণপোকার আওয়াজ
সময়ের মানচিত্রে দেখা দেয় কেবল
এক অচেনা আঁধারী সাঝ




*****************
১২ই কার্তিক, ১৪১৯
মতিঝিল, ঢাকা।

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১২

বিষন্ন বেলার বাঁশি








ক্রমে ক্রমেই সরে যাচ্ছে আশেপাশের তারা সকল
প্রচণ্ড গতিবেগে ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশজুড়ে
যেন হয়েছে আরেকটি বৃহৎ বিষ্ফোরন, সৃষ্টির আদিকালের মতো
তবুও জেগে ওঠেনা এখন নূতন কোন‌ ‍‍কিউরিওসিটি
অতীত বর্তমানের প্রান্তজুড়ে-কোন নূতন প্রানের সন্ধানে
বিগব্যাং থেকে ব্ল্যাকহোলের মধ্যবর্তী যতো।

জ্বলেই চলেছে প্রমেথিউসের আগুন
প্রতীক্ষার অবসানে দেখছেনা আর শিশিরকণার স্ফূরণ
ঝাউবনের হাসি
যেন:
টেনে চলা হন্তারক সময় বাজিয়ে চলেছে কেবল
এক বিষন্ন বেলার বাঁশি।